সরল বর্তনীতে ও'মের সূত্র প্রয়োগ করে বর্তনীর প্রবাহ, রোধ প্রভৃতি নির্ণয় করা যায়। কিন্তু বর্তনী জটিল হলে ও'মের সূত্র তার জন্য যথেষ্ট হয় না। যে কোনো বর্তনীর প্রবাহ, রোধ ইত্যাদি নির্ণয়ের জন্য ফিলফের দুটি সূত্র আছে। সূত্রগুলো নিচে দেয়া হলো :
অর্থাৎ
যেহেতু বর্তনীর কোনো বিন্দুতেই তড়িতাধান সঞ্চিত হয় না কাজেই যে কোনো সংযোগ বিন্দুতে আগত মোট প্রবাহ ঐ বিন্দু থেকে নির্গত মোট প্রবাহের সমান হবে।
৩.৬ চিত্রে সংযোগ বিন্দু O-তে I1 ও I2 প্রবেশ করছে এবং ঐ বিন্দু থেকে l2, l4 ও I5, প্রবাহ নির্গত হচ্ছে।
এখন আগত প্রবাহগুলোকে ধনাত্মক ও নির্গত প্রবাহগুলোকে ঋণাত্মক ধরলে কির্শফের সূত্রানুসারে,
l1 + l3 -l2 -l4 - l5 = 0
আগত প্রবাহকে ঋণাত্মক এবং নির্গত প্রবাহকে ধনাত্মক ধরলেও একই ফল পাওয়া
অর্থাৎ … (3.15)
এ সূত্রানুসারে কোনো আবদ্ধ বর্তনীতে বিভিন্ন অংশে যে সকল প্রবাহ চলে ঐ সকল প্রবাহকে আনুষঙ্গিক রোধ দিয়ে গুণ করলে ঐ বর্তনীর মোট তড়িচ্চালক শক্তির সমান হবে।
এই সূত্র চিত্র ৩.৭-এর মতো যে কোনো আবদ্ধ বর্তনীতে প্রয়োগ করা যায়। E তড়িচ্চালক শক্তির উৎসসহ একটি আবদ্ধ বর্তনী ABDA বিবেচনা করা যাক। তীর চিহ্নের মাধ্যমে বর্তনীর স্বতন্ত্র অংশের প্রবাহের অভিমুখ দেখানো হয়েছে। বর্তনী বরাবর যেতে প্রতিটি বাহুর রোধকে যদি আমরা আনুষঙ্গিক প্রবাহ দিয়ে গুণ করি এবং সর্বশেষ সবগুলো যোগ করি তাহলে আমরা যে মান পাই তা E-এর সমান। অন্য কথায়,
I1r1 + l2r2 + I6r6 = E
আবদ্ধ বর্তনীর (যেমন, ABDFA) কোনো বাহুতে যদি কোষ না থাকে তাহলে তীর চিহ্নিত পথে বর্তনী দিয়ে যেতে আমরা পাই,
l1r1 + l2r2 - l3r3 - l4r4 = 0
এখানে চিহ্ন নেয়ার নিয়মটি স্বেচ্ছাগৃহীত। আমরা কখনো যদি তড়িৎ প্রবাহের নির্দিষ্ট দিককে নির্বাচন করি তাহলে তড়িচ্চালক শক্তি দ্বারা ঐ দিকে পাঠানো প্রবাহকে ধনাত্মক ধরা হবে এবং এর বিপরীত দিকে পাঠানো প্রবাহকে ঋণাত্মক ধরা হবে। কোনো আবদ্ধ বর্তনীতে যদি ঘড়ির কাটার গতির অভিমুখে প্রবাহগুলোকে ধনাত্মক ধরা হয়, তাহলে ঘড়ির কাঁটার গতির বিপরীত দিকের প্রবাহগুলো হবে ঋণাত্মক। বিপরীতক্রমে যদি ঘড়ির কাঁটার গতির বিপরীত দিকের প্রবাহগুলোকে ধনাত্মক ধরলে ঘড়ির কাঁটার গতির অভিমুখে প্রবাহগুলো হবে ঋণাত্মক।
কোনো জটিল বর্তনীতে অনেকগুলো আবদ্ধ বর্তনী থাকলে সবগুলো আবদ্ধ বর্তনীতেই প্রবাহের অভিমুখের বেলায় অবশ্যই একই নিয়ম মেনে চলতে হবে। এতে হিসাবের জটিলতা বিশেষ করে চিহ্ন বিষয়ক জটিলতা অনেক কমে যায়। কোনো আবদ্ধ বর্তনীতে যদি দুই বা ততোধিক তড়িচ্চালক শক্তির উৎস থাকে তাহলে ঐ বর্তনীর মোট তড়িচ্চালক শক্তির উৎস হবে স্বতন্ত্র তড়িচ্চালক শক্তিগুলোর বীজগাণিতিক যোগফল। যোগের সময় তাদের অভিমুখ অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।
অর্থাৎ
(Uses of Kirchhof's Laws)
৩.৮ চিত্রে A ও B বিন্দুর মধ্যে দুটি রোধ R ও R2 সমান্তরাল সংযোগে সাজানো আছে। মূল প্রবাহ I হলে তা A বিন্দুতে এসে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে R1 ও R2 এর মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে পুনরায় B বিন্দুতে মিলিত হয়। ধরা যাক,
R1 ও R2-এর মধ্যদিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহের মান যথাক্রমে l1 ও l2 ।
আমরা এখন কির্শফের সূত্র ব্যবহার করে তড়িৎ প্রবাহ l1 ও l2 এবং A ও B বিন্দুর বিভব পার্থক্য নির্ণয় করবো।
A বিন্দুতে কির্শফের ১ম সূত্র প্রয়োগ করে পাই,
I = l1 + l2
ABA বদ্ধ বর্তনীতে কির্শফের ২য় সূত্র প্রয়োগ করে পাই,
l1R1 - l2R2 =0
বা, I1R1 =I2R2
চারটি রোধ পরপর শ্রেণিবদ্ধভাবে যদি এমনভাবে সাজানো হয় যে, প্রথমটির প্রথম প্রান্তের সাথে শেষটির শেষ প্রাপ্ত মিলে একটি বদ্ধ বর্তনী তৈরি হয় এবং যে কোনো জুটি রোধের সংযোগস্থল ও অপর দুটি রোধের সংযোগস্থলের মধ্যে একটি কোষ ও অন্য দুটি সংযোগস্থলের মাঝে একটি গ্যালভানোমিটার যুক্ত থাকে তবে সেই বর্তনীকে হুইটস্টোন ব্রিজ বলে।
৩-৯ নং চিত্রে P, Q, S S R এই চারটি রোধ পর পর সাজিয়ে একটি বদ্ধ বর্তনী তৈরি করা হয়েছে। P ও R-এর সংযোগস্থল A এবং Q ও S এর সংযোগস্থল C-এর মধ্যে চাবি K সহ একটি কোষ E যুক্ত আছে। P ও Q এর সংযোগস্থল B এবং R ও S এর সংযোগস্থল D এর মধ্যে একটি গ্যালভানোমিটার যুক্ত করা আছে যার রোধ G। এটি একটি হুইটস্টোন ব্রিজ।
চাবি বন্ধ করলে কোষ E থেকে প্রবাহ I নির্গত হয়ে A বিন্দুতে এসে l1 ও l2 এ দু অংশে বিভক্ত হয়ে যথাক্রমে P ও R এর মধ্য দিয়ে B ও D বিন্দুতে পৌঁছে। এখন B বিন্দুর বিভব D বিন্দুর বিভবের চেয়ে বেশি হলে l1 এর কিছু অংশ lg গ্যালভানোমিটারের মধ্য দিয়ে D বিন্দুতে এসে l2-এর সাথে মিলে l4 হয়ে S-এর মধ্যদিয়ে C-তে পৌঁছায়। অপরদিকে এর বাকি অংশ l3, Q-এর মধ্যদিয়ে C তে পৌঁছে l4 এর সাথে মিলে মোট প্রবাহ l হয়ে E-তে ফিরে আসে। আর D বিন্দুর বিভব B বিন্দুর চেয়ে বেশি হলে l2-এর কিছু অংশ গ্যালভানোমিটারের মধ্যদিয়ে B বিন্দুতে এসে l2-এর সাথে মিলিত হয়ে Q-এর মধ্যদিয়ে C-তে পৌঁছায় এবং l2 এর বাকি অংশ S- এর মধ্যদিয়ে C-তে পৌঁছে মোট প্রবাহ I হয়ে E-তে ফিরে আসে।
কিন্তু B ও D বিন্দুর বিভব সমান হলে গ্যালভানোমিটারের মধ্যদিয়ে কোনো প্রবাহ চলবে না অর্থাৎ lg = 0 হবে ফলে গ্যালভানোমিটারের কাঁটাও বিক্ষিপ্ত হবে না। এই অবস্থাকে হুইটস্টোন ব্রিজের ভারসাম্য অবস্থা বা সাম্য অবস্থা বা নিস্পন্দ অবস্থা বলে।
৩.৭ চিত্রানুসারে B বিন্দুতে কির্শফের প্রথম সূত্র প্রয়োগ করে পাওয়া যায়,
বা, …(3.21)
আবার D বিন্দুতে কির্শকের প্রথম সূত্র প্রয়োগ করে পাওয়া যায়,
…(3.22)
গ্যালভানোমিটারের ভেতর দিয়ে যখন কোনো তড়িৎ প্রবাহিত হয় না অর্থাৎ হুইটস্টোন ব্রিজের ভারসাম্য অবস্থায় lg =0
তখন (3.21) সমীকরণ থেকে পাওয়া যায়, I1 = l3
(3.22) সমীকরণ থেকে পাওয়া যায়, l2 = l4
এটিই হুইটস্টোন ব্রিজের ভারসাম্যের শর্ত। (3.27) সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে, P, Q, R ও S এর মধ্যে যে কোনো তিনটি রোধ জানা থাকলে চতুর্থ রোধ নির্ণয় করা যায়। হুইটস্টোন ব্রিজের চারটি রোধ P, Q, R এবং S কে হুইটস্টোন ব্রিজের যথাক্রমে ১ম বাহু, ২য় বাহু, ৩য় বাহু ও ৪র্থ বাহু বলা হয়।
Read more